এই বিষয়টি নিয়ে তরুণদের মধ্যে প্রচুর কৌতূহল, ভুল ধারণা এবং অহেতুক ভীতি কাজ করে।
ইন্টারনেট এবং বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া নানা রকম তথ্যের কারণে অনেকেই বিভ্রান্ত হন।
“প্রতিদিন বীর্যপাত করলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়,” “চোখের ক্ষতি হয়,” বা “শরীরের বৃদ্ধি থেমে যায়” – এমন অনেক মিথ প্রচলিত আছে।
Deedly
Namaz Tracker for Muslims
কত আর পর্ন ভিডিও দেখবেন ভাই? মরবেন তো একদিন। নামাজের কোন খবর আছে? গত সাতদিনে কয় ওয়াক্ত নামাজ মিস করেছেন, হিসাব রেখেছেন? আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করেন এবং চলেন আমরা একসাথে এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসি এবং নামাজে মনযোগী হই।
Join Facebook Groupআজকের এই লেখায় আমরা কোনো কল্পকাহিনী বা ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে নয়, বরং বিজ্ঞান ও শারীরিক বাস্তবতার নিরিখে জানব যে প্রতিদিন বীর্যপাত হলে আপনার শরীরে ঠিক কী কী ঘটতে পারে।
প্রথমেই বোঝা দরকার: বীর্য কী এবং কীভাবে তৈরি হয়?
বীর্য বা সিমেন হলো একটি জৈব তরল যা শুক্রাণু (Sperm) এবং বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তরলের সমন্বয়ে গঠিত।
এর মধ্যে মাত্র ১-২% শুক্রাণু থাকে। বাকি ৯৮-৯৯% হলো সেমিনাল ফ্লুইড, যা মূলত জল, প্রোটিন, ফ্রুক্টোজ (এক প্রকার চিনি), এনজাইম এবং জিঙ্ক ও ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ দিয়ে গঠিত।
প্রতিবার বীর্যপাতের মাধ্যমে শরীর থেকে যে পরিমাণ পুষ্টি ক্ষয় হয়, তা অত্যন্ত নগণ্য। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে:
- প্রোটিন: প্রতিবার বীর্যপাতে প্রায় ০.২৫ গ্রাম প্রোটিন নির্গত হয়, যা একটি ডিমের প্রোটিনের ২০ ভাগের এক ভাগেরও কম।
- জিঙ্ক: জিঙ্কের পরিমাণও খুব সামান্য, যা কয়েকটি বাদাম বা এক গ্লাস দুধ থেকেই পূরণ হয়ে যায়।
সুতরাং, একজন ব্যক্তি যদি সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করেন, তাহলে প্রতিদিন বীর্যপাতের কারণে তার শরীরে পুষ্টির কোনো উল্লেখযোগ্য ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। শরীর খুব দ্রুত এই উপাদানগুলো পুনরায় তৈরি করে ফেলে।
যাইহোক, চলেন এবার জেনে নেই প্রতিদিন বীর্যপাত করলে কি কি হতে পারে!
নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
১) সাময়িক ক্লান্তি:
প্রথমত যেই মূল সমস্যা হয়, সেটা হলো সাময়িক ক্লান্তি!
বীর্যপাতের পর প্রোল্যাক্টিন হরমোনের ক্ষরণের কারণে কিছুক্ষণের জন্য হালকা ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব আসতে পারে।
তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী কোনো দুর্বলতা নয় এবং কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলেই শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
২. আসক্তি
মূল সমস্যাটি শারীরিক নয়, বরং মানসিক।
যদি বীর্যপাত বা হস্তমৈথুনের অভ্যাসটি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে তা আপনার দৈনন্দিন কাজ, পড়াশোনা, সামাজিক সম্পর্ক বা দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে, তবে তা আসক্তির পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
এটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক। এবং আপনার উচিত এখনই তা ছেড়ে দেওয়া!
৩. ত্বকের সংবেদনশীলতা
অতিরিক্ত হস্তমৈথুন বা শারীরিক কার্যকলাপের কারণে যৌনাঙ্গের চামড়ায় হালকা জ্বালাপোড়া বা সংবেদনশীলতা তৈরি হতে পারে।
পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক পদ্ধতি না মানলে এটি হতে পারে।
প্রচলিত ভুল ধারণা বনাম বাস্তবতা
ভুল ধারণা | বাস্তবতা |
প্রতিদিন বীর্যপাত করলে শরীর দুর্বল ও শক্তিহীন হয়ে যায়। | বীর্যে পুষ্টির পরিমাণ নগণ্য। ক্লান্তিভাব আসে হরমোনের কারণে, যা সাময়িক। |
এতে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, চুল পড়ে বা ব্রণের সমস্যা হয়। | এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এগুলো মূলত হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা অন্য কারণে হয়। |
শুক্রাণু একসময় শেষ হয়ে যাবে। | শরীর ক্রমাগত শুক্রাণু তৈরি করে। এটি কখনো শেষ হয় না। |
এটি স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয় এবং মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। | এর সপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং মানসিক চাপ কমিয়ে মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। |
কখন চিন্তার কারণ হতে পারে?
সাধারণত প্রতিদিন বীর্যপাত করা ক্ষতিকর নয়, যদি সেটা স্ত্রী সহবাস হয়।
তবে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত:
- যদি বীর্যপাতের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হয়।
- বীর্যের রঙ বা গন্ধে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলে।
- যদি এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনে এতটাই প্রভাব ফেলে যে আপনি স্বাভাবিক কাজ করতে পারছেন না।
- যদি আপনি এবং আপনার সঙ্গী সন্তান ধারণের চেষ্টা করছেন (এক্ষেত্রে শুক্রাণুর ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য ডাক্তার কিছুদিন বিরতি দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন)।
শেষ কথা
শারীরিকভাবে সুস্থ এবং মানসিকভাবে স্বাভাবিক একজন মানুষের জন্য প্রতিদিন বীর্যপাত করা ক্ষতিকর কিছু নয়। শরীর তার প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করে নিতে সক্ষম। মূল বিষয়টি হলো ভারসাম্য।
যেকোনো কিছুই অতিরিক্ত করা হলে তা আসক্তির পর্যায়ে চলে যেতে পারে, যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
তাই অহেতুক ভয় বা ভুল ধারণায় কান না দিয়ে নিজের শরীরের কথা শুনুন।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন, পুষ্টিকর খাবার খান এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সুস্থ থাকুন, চিন্তামুক্ত থাকুন।