ভোরের অ্যালার্মটা বাজার সাথে সাথেই শুরু হয় আমাদের দৌড়। এক কাপ চা কোনোরকমে শেষ করে অফিসের জন্য তৈরি হওয়া, রাস্তার জ্যাম ঠেলে কর্মস্থলে পৌঁছানো, সারাদিনের জটিল সব হিসাব আর মানুষের মন জুগিয়ে চলা— দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরটা যখন বিছানায় এলিয়ে দিই, তখন মাঝে মাঝে গভীর রাতে এই প্রশ্নটা মনের জানালায় উঁকি দেয়: এই যে এত আয়োজন, এত ছুটে চলা, আসলে কার জন্য?
আমরা ইটের উপর ইট সাজিয়ে স্বপ্নের বাড়ি তুলি। সেই বাড়ির দেয়াল সুন্দর রঙে রাঙাই, দামী আসবাবপত্রে ঘর সাজাই। ব্যাংকের খাতায় শূন্যের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য দিনরাত এক করে ফেলি।
সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজের বর্তমানকে উৎসর্গ করি। একটা ভালো গাড়ি, একটা বড় পদ, সমাজে একটা সম্মানজনক অবস্থান— এই সবকিছুর পেছনে ছুটতে ছুটতে জীবনের অর্ধেকটা পথ পার হয়ে যায়।
Deedly
Namaz Tracker for Muslims
কত আর পর্ন ভিডিও দেখবেন ভাই? মরবেন তো একদিন। নামাজের কোন খবর আছে? গত সাতদিনে কয় ওয়াক্ত নামাজ মিস করেছেন, হিসাব রেখেছেন? আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করেন এবং চলেন আমরা একসাথে এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসি এবং নামাজে মনযোগী হই।
Join Facebook Groupএই আয়োজন করতে গিয়ে আমরা ভুলে যাই, যে জীবনের জন্য এই আয়োজন, সেই জীবনটাকেই ঠিকমতো উপভোগ করা হলো না।
যদি নিজেকে প্রশ্ন করি, এই সবকিছু কি আমি নিজের জন্য করছি? উত্তরটা शायद পুরোপুরি ‘হ্যাঁ’ হবে না।
আমাদের বেশিরভাগ আয়োজনই হয় অন্যকে দেখানোর জন্য, সমাজের চোখে সফল প্রমাণ করার জন্য, অথবা ভবিষ্যতের এক অনিশ্চিত নিরাপত্তার জন্য। আমরা পরিবারের জন্য করি, সন্তানের জন্য করি।
এই যুক্তিগুলো মহৎ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই দায়িত্বের বোঝা বইতে গিয়ে আমরা কি নিজের কাঁধটাকেই ভুলে যাই?
যে মানুষটা একদিন গিটার বাজাতে ভালোবাসত, তার গিটারটায় আজ ধুলোর আস্তরণ। যে মেয়েটা পূর্ণিমার রাতে খোলা আকাশে তারা দেখতে ভালোবাসত, সে আজ অফিসের ফাইলপত্রের নিচে চাপা পড়ে আকাশ দেখার কথাই ভুলে গেছে।
আমরা এমন এক ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে নষ্ট করি, যে ভবিষ্যৎ হয়তো আমাদের কল্পনার মতো সুন্দর হবে না, অথবা সেই ভবিষ্যৎ পর্যন্ত পৌঁছানোর সুযোগই হয়তো আমাদের হবে না।
জীবনের এই নির্মম সত্যটা আমরা জেনেও না জানার ভান করে থাকি।
দিনশেষে এই বিপুল আয়োজনের কিছুই আমাদের সাথে যাবে না। পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে আমাদের অভিনয় যখন শেষ হবে, তখন দামী গাড়িটা গ্যারেজেই পড়ে থাকবে, ব্যাংকের টাকাগুলো খাতাতেই থেকে যাবে, আর সযত্নে গড়া বাড়িটাতে হয়তো অন্য কেউ বাস করবে।
সাথে যাবে শুধু কিছু স্মৃতি, কিছু ভালোবাসা আর কিছু না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস।
তাহলে কি এই সব আয়োজন অর্থহীন? হয়তো না। কিন্তু আয়োজনের উদ্দেশ্যটা হয়তো আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।
শুধু ভবিষ্যতের জন্য নয়, বর্তমানের জন্যেও কিছু আয়োজন করা দরকার। যে আয়োজন আমাদের আত্মাকে শান্তি দেবে, মনকে আনন্দিত করবে। এমন কিছু মুহূর্তের আয়োজন, যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
প্রিয়জনের সাথে কাটানো কিছুটা সময়, নিজের কোনো শখকে নতুন করে জাগিয়ে তোলা, অথবা কোনো এক সন্ধ্যায় প্রকৃতির মাঝে চুপচাপ বসে থাকা— এই ছোট ছোট আয়োজনগুলোই হয়তো জীবনের আসল প্রাপ্তি।
নইলে জীবনের শেষ বেলায় পৌঁছে যখন পেছনের দিকে তাকাবো, তখন হয়তো দেখব— এক বিশাল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু যার জন্য এই আয়োজন, সেই ‘আমি’ নামের মানুষটাই কোথাও হারিয়ে গেছে।
আর এই অপ্রাপ্তির চেয়ে বড় আক্ষেপ হয়তো আর কিছু হতে পারে না।